ইংরেজি অনার্স সম্বন্ধে পাঁচটি তথ্য যা না জেনে কখনোই এই কোর্সে ভর্তি হওয়া উচিত নয়


তো কি খবর ? কেমন আছো সকলে ? অবশেষে উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল ঘোষণা হল । এবারে কলেজ । রোমাঞ্চকর ব্যাপার । অজস্র বিষয়, কোনটাতে অনার্স নিই কোনটাতে না ! সত্যি ভারী ভাবনার বিষয় । এই সময়টাতে বোঝে ওঠা দায় হয়, নিজের পছন্দ অপছন্দও যেন অচেনা মনে হয় । এর জন্যে আমি বলব, এই মুহূর্তে যে বিষয় তুমি সব থেকে বেশি জানো সেই বিষয় নিয়েই পড়াশোনা চালিয়ে যাও । পরে নিজের ইচ্ছা ও ক্ষমতা স্পষ্ট হলে সেই পথে হেঁটো । কারণ, যেকোনো বিষয়েই পাণ্ডিত্য অর্জন করতে পারলে ভাল উপার্জন সম্ভব । প্রয়োজন বোধ, জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন । বেশ এই পোষ্টের উদ্দেশ্য অবশ্যই ওসব জ্ঞান মুখর কথা বলা নয় । বরং, যারা কলেজে ইংরেজি অনার্স পড়ার কথা ভাবছো তাদের জন্য । অধিকাংশ ইংরেজি অনার্সের ছাত্রই ইংরেজি অনার্স কি জিনিস তা না জেনেই ইংরেজি অনার্স নিয়ে ফেলে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বরের ভিত্তিতে । পরে শুরু হয় সমস্যা, যা কিনা ভালই লাগেনা পড়তে হয় তা-ই । যেন তোমার সাথে তা না হয় সেজন্যেই এই পোষ্ট । ইংরেজি অনার্স বিষয়ে পাঁচটি সত্য বলব, তাহলে চল শুরু করি...

১) ইংরেজি ভাষায় রচিত সাহিত্যে অনার্স, ইংরেজি ভাষায় নয়

এই একটা ভুল শিক্ষার্থীরা করে, তাদের ধারনা থাকে যে ইংরেজি অনার্স মানে ইংরেজি গ্রামারই তো অর্ধেক থাকবে, ঠিক যেরকম স্কুলে । ভয়েস চেঞ্জ, নেরেশন ইত্যাদি । আমি তো পারি । না দাদাঠাকুর, তোমাকে ইংরেজি সাহিত্য পড়তে হবে, ইংরেজি যেহেতু একটা আন্তর্জাতিক ভাষা তাই ধরে নিতে পারো সব মহাদেশেরই কম বেশি লেখা পরতে হবে । তবে ইংরেজি ভাষার উৎপত্তি যেহেতু ব্রিটেনে, আর যেহেতু ওখানকার লোকেরাই ইংলিশ নামে পরিচিত তাই ব্রিটেনের সাহিত্যই হবে মুল আধার । তো কোথা হচ্ছে, সাহিত্য সাহিত্য আর সাহিত্য । এবার তোমার যদি সাহিত্য নামে অরুচি থাকে, মোটা মোটা নভেল দেখলে মাথা ঝিম ধরে যায় তাহলে কিন্তু ইংরেজি অনার্সের ছাত্র তুমি নও । তুমি পরীক্ষার আগে উইকিপেডিয়া পড়বে আর সারা বছর প্রাইভেট টিউটরের বাড়ি ছুটবে এবং ভুলভাল নোট লিখে আনবে । তিন বছর পর একটা ডিগ্রি ঠিকই পেয়ে যাবে, কিন্তু ও ডিগ্রি লাগবেনা কোন কাজেই ।

২) ইতিহাসে পাতিহাঁস হলে চলবেনা

জি জনাব, সাহিত্য ইতিহাস বিস্মৃতদের জন্যে নয় । সাহিত্যের আগাগোঁড়া ইতিহাসে মোড়া । যেমন সাহিত্যের ইতিহাস জানতে হবে ঠিক তেমনি জানতে হবে পৃথিবীর ইতিহাস বিশেষ করে ইংলন্ডের । ইতিহাস জানা বলতে যদি বোঝ ঘটনাক্রম জানা তাহলে কিন্তু সমস্যা হয়ে যাবে, ইতিহাসকে জানতে হবে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে । নাহলে বোধ জন্মাবে কেমন করে ? বোধই ভগবান ।

৩) এখানে কবিতা লেখা শেখানো হয়না, কবিতার পোষ্টমরটেম করতে শেখানো হয়

ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রদের মধ্যে আবার অনেকেই কবি হয়ে থাকে, সাধারণত অখাদ্য নর্দমা লেখাই ওদের হাতে
বেরোয় । তবু ওরা কবি । তো কোন কবিরাজ যদি থাকো যে ভাবছো ইংরেজি সাহিত্য কলেজে গিয়ে পড়লে লেখার হাতটা খুলে যাবে তাহলে জেনে রাখো টা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম । আর্ট সৃষ্টি করা আর আর্ট নিয়ে লেখাপড়া করা এক জিনিস নয় । ইংরেজি অনার্স তমাকে সাহিত্যের সমালোচক হওয়ার শিক্ষা দেবে কবি হওয়ার নয় । তবে ইচ্ছে হলে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এর একটা ডিপ্লোমা কোর্স করতে পারো । কিন্তু যে কথা সার কথা, ক্রিয়েটিভিটি ব্যাপারটাই হচ্ছে নিয়ম ভাঙা, সেখানে ইউনিভার্সিটির কোর্স তমাকে শেখাবে নিয়ম – এতে লাভ কতটুকু হবে বুঝতেই পারছ । কমার্শিয়াল ফিকশনের গণ্ডি পেরোতে পারবেনা । সেজন্যেই কবি লিখেছেন, "সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি" ।

৪) দক্ষতা কিসের ?

যেকনো কোর্সে ভর্তি হওয়ার আগে এই প্রশ্নটা অবশ্যই করতে হয় । তিন বছর পরিশ্রমের পর কি থাকবে হাতে যা অর্থ উপার্জনে সাহায্য করবে ? ইংরেজি অনার্সে পাচ্ছ Critical Thinking ও Academic Writing Skill । তবে হ্যাঁ, স্যারের দেয়া নোট মুখস্ত করলে এসব পাচ্ছনা, পাবে কাঁচকলা । পাশ দেয়ার পর একদিন কাতলা মাছ দিয়ে ঝোল রেঁধে খেতে পারবে ।

৫) এরপর কি করা যায় ?

এরপরে যেটা সাধারণত লোকেরা করে তা হচ্ছে বেকারের খাতায় নাম লেখানো । তুমি চাইলে অন্য কিছুও করতে পারো, জার্‌নালিজমে পোষ্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা করে সাংবাদিকতা করতে পারো । স্বাধীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারো । লেখালেখি করতে পারো । লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারো, MA করে PHD অথবা MPHIL করতে পারো । নাহয় B.ED. করতে পারো, সরকারি কলেজে চান্স না পেলে পশ্চিমবঙ্গে পয়সা ঢেলে করতে পারো, বিনা পরীক্ষায় পাস হওয়া যায় । ব্যস, আর কি চাই ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ