হারানো বসন্ত | Long Spring এর বাংলা অনুবাদ


"তুমি এসব কেন করো ?” সাহেবকে জিজ্ঞেস করলাম । ওর সঙ্গে আমার প্রতিদিন সকালে দেখা হয়, পাড়ার আবর্জনার স্তুপে সোনা খোঁজে নিয়ে যায় । সাহেবরা বাড়ি ছেড়ে এসেছে অনেকদিন । ওদের বাড়ি ছিল ঢাকায়, সবুজ মাঠের মধ্যিখানে - এসব এখন আর স্মৃতিতেও নেই । ওর মা ওকে বলেন, ঝরের কারণে বাড়ি, ঘর, ফসল সব কিছু ভেসে যাওয়ায় বড় শহরে এসেছেন স্বর্ণের সন্ধানে ।

"আমার আর করার মত কিছু নেই", অন্যদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে সাহেব ।

চট করে আমি বলে ফেলি, “ স্কুলে যাও" । পরক্ষনেই বুঝতে পারি উপদেশটা আদপে কতটা ফাঁপা ।

"আমাদের পাড়ায় কোন স্কুল নেই । যখন তৈরি হবে তখন যাব ।" বলে সাহেব ।

"আমি যদি একটা তৈরি করি তাহলে যাবে?” প্রায় মজা করেই বলি আমি ।

মিছে প্রতিশ্রুতি করায় অপ্রস্তুত হয়ে বললাম, "অবশ্য স্কুল নির্মাণ করতে অনেক সময় লাগে" । অবশ্য আমার এই প্রতিশ্রুতির মত হাজারো প্রতিশ্রুতি ওর অন্ধকার জগতের আনাচে কানাচে পড়ে থাকে ।

পরিচয়ের বেশ কয়েক মাস পড়ে ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম । জানাল, সাহেব--আলম । সে জানেনা এই নামের কি অর্থ । যদি জানত এর মানে - মহাবিশ্বের প্রভু - তাহলে এটা মেনে নিতে ওর কষ্ট হত । নিজের নামের অর্থ না জেনেই বন্ধুদের সাথে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় । ভোরের পাখির মত একদল নগ্ন-পা ছেলে । দুপুর হলে অদৃশ্য হয়ে যায় । কয়েক মাসের পরিচয়ে ওদের প্রত্যেকেই আমার পরিচিত হয়ে গেছে ।

তাদের একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, "তুমি চপ্পল পায়ে দাও না কেন?”
সে বলল, “আমার মা ওগুলোকে তাক থেকে নামাতেই দেননা ।"
অন্য একজন বলল, "যদি তিনি দেনও তবুও সে ছুঁড়ে ফেলে দেবে ।" এই ছেলেটির দুই পায়ে দুই রকমের জুতো, এই বিষয়ে আমি মন্তব্য করলে হতচকিত হয়ে সামান্য পা নাড়ে কিন্তু কিছুই বললনা । অন্য একটি ছেলে যে জীবনে কখনো জুতা পায়নি সে বলল, "আমার জুতা চাই" । সারা দেশময় ঘুরে আমি অনেক শিশুদের দেখেছি যারা খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায় । গ্রামের পথে যেমন দেখেছি, শহরের রাস্তায়ও দেখেছি । এটা টাকার অভাবে নয়, বরং খালি পায়ে হাঁটা একটা সংস্কার । আমার বিস্ময় জাগে, কেবল চিরকালীন দারিদ্রতা ঢাকতেই কি এই যুক্তি খাড়া করা হয়নি ?

To be continued...

Post a Comment

0 Comments

X

Never Miss an Update!

Join my newsletter to get the latest posts from AbhijitDas.in directly to your inbox.